দলের কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের পর জামায়াতের ভাবনায় বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আসেনি। দলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল ব্যক্তির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও এর ভিত্তি নড়েবড়ে হওয়ার শঙ্কা নেই দলটিতে। ইতোমধ্যে নির্বাহী পরিষদসহ দলের সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমিরের একাধিক পদ শূন্য হলেও খুব দ্রুততার সঙ্গে এগুলো পূরণ হবে বলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
রবিবার রাতে জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টিকে অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে অতীতে ফাঁসি কার্যকর হওয়া শীর্ষ নেতাদের বাইরে মীর কাসেমের জন্য ভিন্ন কিছুই দেখছে না জামায়াত। যদিও ওইদিন রাতে মীর কাসেমের ফাঁসির পর দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান তার ফাঁসিকে নেতৃত্বশূন্য করার সরকারি ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেছেন।
সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা মহানগরের দ্বিতীয় সারির এক নেতা জানান, মীর কাসেম আলীর ফাঁসিতে অর্থনৈতিক দিকটির ক্ষতি হলেও সাংগঠনিক কোনও বড় ক্ষতি সাধন হয়নি। চলমান আমির নির্বাচনের পরেই সাংগঠনিকভাবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন করা হবে।
হরতাল আধাবেলার নেপথ্যে
জামায়াতের একাধিক স্তরের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, মীর কাসেম আলীর ফাঁসি পরবর্তী সোমবার আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি নিয়ে নানা আলোচনা হলেও আদতে হজযাত্রীদের বিমানবন্দর যাত্রার কারণেই কর্মসূচির সময় কমানো হয়েছে।
এছাড়া মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হওয়ার পরই একদিন হরতাল দিয়েছিল জামায়াত। হরতালের সময় কমানোর অন্য কোনও কারণ নেই। এ বিষয়ে ঢাকার একাধিক নেতাকে ফোন করা হলেও তারা নিজস্ব পরিচয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, দলের আমির নির্বাচন কার্যক্রম চলছে। শূন্যপদগুলো স্বাভাবিক নিয়মে পূরণ হবে। হরতাল অর্ধদিবসের বিষয়ে তিনি জানান, সামনে ঈদ তাই হয়তো আধাবেলা করা হয়েছে।
মজলিসে শূরার অন্য এক সদস্য, যিনি ঢাকার একটি এলাকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন, বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, হজযাত্রীদের বিমানবন্দর গমনের সুবিধার কথা চিন্তা করেই হরতাল আধাবেলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, হরতাল সফল করতেও কড়াভাবে সক্রিয় হওয়ার কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি নেতাকর্মীদের। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির পরেও এটা দেখা যায়নি। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আজীবন কারাদণ্ডের রায় ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর রাজপথে নাশকতা চালানো হলেও বিগত দুই বছরে কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা থেকে দূরে ছিল জামায়াত। অনেক নেতার মতে, মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে ডাকা সোমবারের হরতালেও তেমনটা সক্রিয় দেখা যাবে না নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে গায়েবানা জানাজাও এড়িয়ে গেছে জামায়াত। রবিবার সারাদেশে মীর কাসেমের জন্য দোয়া করা হয়েছে। কিছু জায়গায় গায়েবানা জানাজাও হয়েছে অনেকটা চুপিসারে।
রবিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মীর কাসেম আলীর শাহাদাত কবুল ও তার রূহের মাগফিরাত কামনা করে দেশে এবং বিদেশে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, দৃপ্ত শপথে বলিয়ান এই তরুণ সমাজ একদিকে যেমন মীর কাসেম আলীর স্বপ্ন পূরণ করবে, তেমনি এই পরিকল্পিত হত্যার হিসাব কড়ায় গণ্ডায় আদায় করবে। বাংলা ট্রিবিউন
পাঠকের মতামত: